ইস্তেখারার নামাজ — সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নবীজি ﷺ প্রদত্ত এক অলঙ্ঘনীয় পদ্ধতি। আমরা যখন জীবনের কোনো গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বিধায় পড়ি (যেমন: বিয়ের প্রস্তাব, চাকরি, পড়াশোনা, ভর্তির সিদ্ধান্ত, ব্যবসা, মাইগ্রেশন, কাউকে বিশ্বাস করা ইত্যাদি), তখন ইস্তেখারার মাধ্যমে আল্লাহর দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়।
![]() |
ATPC |
📿 ইস্তেখারার নামাজ: পূর্ণ নির্দেশনা (নবীজি ﷺ এর সহিহ হাদীস অনুসারে)
🔹 অর্থ:
“ইস্তিখারাহ” শব্দটি এসেছে ‘খাইর’ শব্দ থেকে, যার অর্থ “মঙ্গল কামনা”। সুতরাং ইস্তেখারাহ মানে হলো: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম পথ বেছে নেওয়ার জন্য দোয়া করা।
🕌 ইস্তেখারার নামাজ পড়ার নিয়ম (ধাপে ধাপে)
✅ ১. নিয়ত করা:
-
মনে মনে সিদ্ধান্তহীন বিষয়টি স্থির করে নিন (যেমন, একটা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হব কি না)।
-
এরপর ২ রাকাত নামাজ পড়ুন।
✅ ২. নামাজ পড়ার পদ্ধতি:
-
যে কোনো সময় আদায় করা যাবে (তবে মাকরুহ সময় বাদে)।
-
এটি নফল নামাজ।
-
২ রাকাত নামাজ পড়ুন এই নিয়তে যে আপনি ইস্তেখারার নামাজ আদায় করছেন।
১ম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সুরা কাফিরুন পড়া উত্তম।
২য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়া উত্তম।
🤲 ৩. নামাজ শেষে এই দোয়াটি পড়ুন:
এই দোয়াটি রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজে শিখিয়েছেন (সহিহ বুখারী, হাদীস: ১১৬৬):
اللَّهُمَّ إنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ،
فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوبِ،
اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ،
وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ
📝 বাংলা অনুবাদ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞান অনুযায়ী কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আপনার শক্তির মাধ্যমে সামর্থ্য প্রার্থনা করছি এবং আপনার অপার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।
নিশ্চয় আপনি পারেন, আমি পারি না। আপনি জানেন, আমি জানি না। আপনি অদৃশ্য বিষয়গুলোর পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন।
হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন যে, (এখানে আপনার ইচ্ছাকৃত বিষয়টি বলুন) — এটি আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া এবং পরিণতির দিক দিয়ে কল্যাণকর, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন এবং সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন।
আর যদি আপনি জানেন যে, এটি আমার জন্য ক্ষতিকর, তাহলে আমাকে এটি থেকে ফিরিয়ে দিন এবং এটিকে আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমার জন্য কল্যাণ যেখানেই থাকুক তা নির্ধারণ করে দিন এবং আমাকে এতে সন্তুষ্ট করুন।
🕰️ কোন সময় পড়া উত্তম?
-
রাতে তাহাজ্জুদের সময় পড়া সবচেয়ে বরকতময়।
-
তবে আপনি যে কোনো সময় (ফরজ নামাজের পরে বা নির্জনে) পড়ে নিতে পারেন, শুধু মাকরুহ সময় বাদে (যেমন: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ইত্যাদি)।
💤 সাধারণত কী হয়?
-
অনেক সময় স্বপ্নে কোনো ইঙ্গিত আসে — মনের প্রশান্তি, সাদা বা সবুজ রঙ, ভালো অনুভূতি ইত্যাদি।
-
কখনো স্বপ্ন আসে না — তবে আল্লাহ তায়ালা আপনার অন্তরে সহজ করে দেন সঠিক সিদ্ধান্ত।
-
আপনি হঠাৎ কোনো এক দিকেই মন ঝুঁকে যাবেন — সেটাই হয়ত ইশারার ফল।
📌 গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
-
দোয়ায় “হাজাল আমর” (এই কাজটি) বলার সময় আপনি আপনার কাজটি মনে করে নেবেন। চাইলে মুখেও উচ্চারণ করতে পারেন।
-
স্বপ্নে সাদা বা সবুজ = ভালো ইশারা, কালো বা লাল = অপছন্দের ইঙ্গিত হতে পারে, তবে চূড়ান্ত বিচার হলো মন প্রশান্ত হয় কিনা।
ইস্তেখারা মানে ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া নয়। বরং আল্লাহর উপর আস্থা রেখে, তাঁর সাহায্য চাওয়ার প্রক্রিয়া। ইস্তেখারার পর যা সহজ হবে, তাতেই কল্যাণ।
📖
💠 ইস্তেখারা আমাদেরকে শেখায়, জীবন নিজের চিন্তা নয় — বরং আল্লাহর হেদায়েতে চালানো।
💠 যারা আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, তারা অন্ধ নয়, বরং সবচেয়ে আলোয় থাকে।